কে কথা কয়-ke kotha koy।। হুমায়ুন আহমেদ বইয়ের রিভিউ

লেখক: হুমায়ুন আহমেদ 
প্রকাশক: অন্যপ্রকাশ 
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি,২০০৬
মূল্য :৬৫০ টাকা
রিভিউ লিখেছেন: নুসরাত জাহান

ভূমিকায় জানানো হয় এ বইটির বীজ এসেছে  Karen Armostrong এর "The Spiral Staircase" এবং Mark Haddon এর "The curious incident of the dog in tha right time" বই দুটি থেকে। 

হুমায়ূন আহমেদের এ উপন্যাসটি একটু ভিন্ন ধরনের।যেখানে সমাজের ও পরিবারের বাস্তব ঘটনাগুলো ফুটে উঠেছে।  উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের সাথে পরিচিত হওয়া যাক।

বই: কে কথা কয়

কমল: এক অস্টিস্টিক শিশু।কমলের বয়স ১০-১১। এ চরিত্রটি একটু রহস্যময়।  প্রচন্ড জেদি ও একরোখা। মিথ্যাকথা  সে পছন্দ করে না। গণিতে খুব পারদর্শী।যে বেশির ভাগ কথাই উল্টা করে বলে।

মতিন: ২৭ বছর বয়সী এক বেকার যুবক।(কিছুটা হিমু চরিত্রের মতো) পরবর্তিতে মতিন বুঝতে পারে সে একজন মানসিক প্রতিবন্ধী।

কমলের বাবাঃ কমলের বাবা সালেহ ইমরান একজন ব্যারিস্টার ও ধনীব্যক্তি।আদর্শ একজন মানুষ। 

কমলের মাঃ মুনা। মুনা নিজেও একজন বিত্তশালী নারী কিন্তু মানসিক অবসাদগ্রস্ত।

আহমেদ ফারুক: কমলের বাবা সালেহ ইমরানের ম্যনেজার।  যে দেখতে সুদর্শন ও যার সাথে মুনার গোপন সম্পর্ক আছে বলে কমল বুঝতে পারে।

নিশু: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে মাস্টার্স করা তরুণী। সে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে ইংল্যান্ডে PHD করতে যাবে।
নিশুর চারিত্রিক দিক হিসেবে উল্লেখ আছে তার মধ্যে নারীসুলভ লজ্জা,কোমলতা,জড়তা কিছুই নেই।নিশুর সব কথা মতিন মেনে চলে ও বিশ্বাস করে। 

সালেহা: মতিনের বড় বোন। ভয়ানক পেটের পীড়ায় আক্রান্ত, বছরের অধিকাংশ সময় অসুস্থ থাকেন। 

হাবিব: মতিনের দুলাভাই ও সালেহার স্বামী যে মতিনকে পছন্দ করেন না।

তৌহিদা: হাবিবের দুঃসম্পর্কের বোন। যে মতিনকে মনে মনে প্রচন্ড ভালোবাসে তার মনের আশা মতিনকে বিয়ে করবে, সুখের সংসার হবে।

নদ্দিউ নতিম: মতিনের সৃষ্ট কাল্পনিক  উজবেক কবি।যার নাম করে মতিন নিজের লেখা ছাপায়(মতিন উদ্দিনের উল্টা নদ্দিউ নতিম) নদ্দিউ নতিমের একটি কবিতা: 
জলে কার ছায়া পড়ে?
কার ছায়া জলে?
সেই ছায়া ঘুরেফিরে কার কথা বলে?
কে ছিল সেই শিশু? কী তাহার নাম?
নিজের ছায়ারে তার করিছে প্রণাম।

আশরাফ: মতিনের বন্ধু। যে মতিনকে প্রতিমাসে টাকা পাঠায়। প্রকৃতিকে ভালোবেসে যে  পাহাড়ি অঞ্চলে জমি লিজ করে নিজের মতো ভূবন তৈরি করেছে। তার সাথে শুধু মতিনের চিঠি আদান-প্রদান হয়।

গল্প শুরু হয় মতিন উদ্দিন নামের ২৭ বছর বয়সি বেকার যুবককে দেখিয়ে। কমলের সারাদিনের সঙ্গী হিসেবে সে চাকরি পায়।  প্রথম সাক্ষাতে কমল মতিনকে পছন্দ করেনা।কিন্তু পরে মতিন ছাড়া কারো কথা শুনেনা।

পরবর্তীতে মতিন আবিষ্কার করে সে নিজেও কমলের মতো মানসিক বিকারগ্রস্থ কমলের অনেক বিষয় তার সাথে মিলেসম্পন্ন। যেমন মতিন কমলের মতো উল্টা করে কথা বলতে পারে।
 কমলের বাবা সালেহ ইমরান ও মা মুনার মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আহমেদ ফারুকের আগমন কমল বুঝতে পারে।

মতিন প্রায়ই নিশু আর তার বাবার সঙ্গে দেখা করতে তাদের বাড়ি যায়। অজান্তেই তাদের দুজনের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়।কিন্তু মতিনের সমগ্র চেতনা জুড়ে থাকে তার কল্পনায় সৃষ্ট  উজবেক কবি নদ্দীউ নতিম।

মতিনের সাথে তৌহিদার বিয়ে ঠিক করে তার বড় বোন।বিয়ের দিন মতিন তৌহিদাকে চিরকুট পাঠায়  সে তৌহিদাকে বিয়ে করতে পারবেনা। তার বড় বোন সালেহা নিজের স্বামী হাবিবকে জোর করে তৌহিদাকে বিয়ে করতে। হাবিব রাজি না থাকলেও স্ত্রীর জোরাজোরিতে  এ কাজ করেন। 
এতে তৌহিদা কষ্ট পায় এবং  এক সকালে তৌহিদা কাউকে  না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে।আর কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি।

নিশুর বাবা আজিজ আহমেদের মৃত্যুতে নিশু  মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। পরবর্তীতে দেখা যায় কিছু বখাটে যুবক একদিন ঘরে ঢুকে নিশুকে ধর্ষণ করে এবং নিশুর নামে কুৎসা রটায়।

এই উপন্যাসের মূলভাব হলো মানসিক প্রতিবন্ধী  অটিজমে আক্রান্ত কমলের থেকে সমাজের  সুস্থ-সবল ব্যক্তিরা বেশি বিকারগস্ত।  পুরো উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে কমল এখানে অটিস্টিক শিশু হলেও সবচেয়ে বুদ্ধিমান।  তার নোংরা পারিবারিক সত্য বুঝতে পেরে সুইসাইড করতে চায় তখন দেখা যায় মতিন তাকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয়।

উপন্যাসের পরবর্তী অংশে কি রয়েছে? মতিন,কমল আর নিশুর শেষ পরিনতি কি ছিল? 
এসব জানতে হলে পড়তে হবে অন্যরকম উপন্যাস "কে কথা কয়"।

[বি.দ্র. যারা শেখার পাশাপাশি বিনোদনের জন্য বই পড়েন এ বইটি নিঃসন্দেহে তাদের জন্য। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ