চোখের বালি - Chokher Bali রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।। বইয়ের রিভিউ

"চোখের বালি" বাংলা সাহিত্যের স্মরণীয় বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর" এর লিখিত শ্রেষ্ঠ একটি উপন্যাস।

"চোখের বালি" ১৯০৩ সালে লিখিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম সচেতন সাইকোলজিক্যাল উপন্যাস। বুঝাই যাচ্ছে, উপন্যাসটি কোন ক্যাটাগরির ওপরে লিখিত।

বইঃ চোখের বালি


▪️কাহিনী আলোচনা:-

শুরুটা হয় বিনোদিনী নামের চরিত্রের সাথে গল্পের নায়ক মহেন্দ্রের বিয়ের কথা দিয়ে। সে আলোচনা ভুলেই মাঝে এসে উপস্থিত হয় বিনোদিনীর কুঁড়ে খাওয়া জীবন। উল্লেখিত হয়েছে আশা মহেন্দ্রের দাম্পত্য সুখী জীবনের বর্ণনা। গোপনে এসেই যেন ভালোবাসার নিদারুণ বর্ণনা ধরা দেয় "চোখের বালি" বইয়ে। ছোট বর্ণনায় উপস্থিত হয় আশার প্রতি বিহারীর দুর্বলতা। 

হঠাৎ করেই যেন স্ত্রী, পরিবার সব ভুলে মহেন্দ্র দিশেহারা হয়ে যায়। তার বিনোদিনীকে লাগবে! কে সে? তবে একমাত্র সেই বুঝি মহেন্দ্রকে ছন্নছাড়া জীবন থেকে বিরহের জ্বালা কাটিয়ে সুখ দিতে পারে।

পিছিয়ে পড়েও, সব ছেড়ে দূরে চলে যেতে নিলেও বিহারীকে থামতে হয়। বাল্যকালের বন্ধুর ভাঙা পরিবারটিকে জোড়া লাগাতে, নিজের ভালোবাসার মানুষটির মুখে হাসি ফোটাতে, তাকে হতে হয় ত্যাগী! মহা স্বার্থত্যাগী! সকলের ভরসার পাত্র যে সে। মা তুল্য রাজলক্ষ্মীকে সুস্থ করতে মহেন্দ্রকে যে তার খুঁজে বের করতেই হবে। 

এই এত এত অনুভূতি, জরা জীবনকাল, ভাঙা কুঠিরের টুকরো দিয়েই যেন উপন্যাসটিকে ঘিরে রাখে!

কী এমন ঘটনার সাক্ষী উপন্যাসটি? 

কোন ঘটনাকে ঘিরে, কাদেরকে নিয়ে এগিয়ে চলে উপন্যাসের ধারাবাহিকতা? 


▪️কাহিনী সমালোচনা:-

মহেন্দ্র, বিহারী, আশা ও বিনোদিনী_এই চারটি মূল চরিত্র নিয়েই "চোখের বালি" বইটি নিজের রূপে সজ্জিত হয়েছে। প্রতিটি চরিত্রই ছিল বাস্তব জীবনের উদাহরণ।

আরো পড়ুনঃ অপরাজিত উপন্যাস রিভিউ। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

মহেন্দ্র ও আশার দাম্পত্য জীবনের মাঝে হঠাৎ বিনোদিনী পথের কাঁটা হয়ে আসা। নিজের স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব ভুলে পরনারীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়া। বোকার মতো নিজের স্বামীর হাসির কারণ হিসেবে বিনোদিনীকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এসব নিয়েই কাহিনী নিজের পথে হাঁটতে থাকে। আশার প্রতি বিহারীর গোপন ভালোবাসাটাই যেন বিনোদিনীর চোখে হিংসার কারণ হয়ে উঠে। 

সবাই কেন আশাকেই ভালোবাসবে?

মূলত, অপ্রাপ্তির শিকার, হিংসা, দায়িত্বহীনতা, স্বার্থপরতা এসব নিয়েই উপন্যাসটিকে সাজানো হয়েছে।


▪️ব্যক্তিগত পাঠ প্রতিক্রিয়া:-

আমার পাঠ প্রতিক্রিয়াতে আমি সবার আগে মূল চরিত্রগুলোকে নিয়ে বলবো। 

মূল চরিত্র(নায়ক) মহেন্দ্র__

ইনি বড় পরিবারের একমাত্র সন্তান। মায়ের আদরের পালিত ছেলে। বাস্তব ধারণা থেকে নিজেকে দূরে রেখে সর্বদা নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ইনিই এক পর্যায়ে নিজের স্বার্থের জন্য পাগল হয়ে ছুটে চলেন বিনোদিনীর পিছে। মা, স্ত্রী, পরিবার সব ভুলে সুবহে সন্ধ্যা মুখে মুখে বিনোদিনীর নাম জপতে থাকেন। 

চরিত্রটি আমার কাছে কিছুটা ঘোলাটে। ইনি একেক সময়ে একেক ভঙ্গিতে নিজেকে প্রকাশ করেন। কখনো তিনি স্বীয় অর্ধাঙ্গিনী আশার প্রেমে নত হোন তো কখনো তার তনু মনে বিড়বিড় করে ডেকে উঠে, "বিনোদিনী...!"

আশা__রাজলক্ষ্মী ছেলের মলিন মুখ দেখে  দুনিয়া ভুলে যান যেন। দিন রাত এক করে তিনি সবশেষে আশাকেই পুত্রবধূ করে ঘরে তোলেন। তার আদরের ছেলের মুখে তিনি মলিনতা একেবারেই দেখতে পারেন না।

তবে ভাগ্য কী নিদারুণ খেলাই না খেলে! সহজ সরল মনের আশা, স্বামীর উষ্ণ বুকের ভালোবাসা পেয়েও নিজ হাতে হারিয়ে ফেলে। নিজেকে স্বামীর কাছে তুলে না ধরে মরিয়া হয়ে ওঠে বিনোদিনীকে পরিচয় করিয়ে দিতে। কী বোকা, কী বোকা! 

আশা কি পেরেছিল মহেন্দ্রকে সবশেষে নিজের স্বামী রূপেই ফিরিয়ে আনতে? একান্তই নিজের করে....?

প্রশ্ন থেকে যায়! 

বিহারী__পাঠ প্রতিক্রিয়াতে তো অবশ্যই আমি বলবো, বিহারী বাবু আমার খুব পছন্দের একটি চরিত্র। যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়, "চোখের বালি" উপন্যাসে সবথেকে নজরকাড়া চরিত্র কোনটি? চোখ বন্ধ করে আমি আগে নাম নেবো বিহারীর। একদম পারফেক্ট একটা চরিত্র! 

কখনো কখনো নিজের অনুভূতিকে বালি চাপা দিয়ে সামনের মানুষটাকে ভালো থাকতে দিতে হয়। অবুঝ মনের তোলপাড় করা ঝড়কে চাপা নিঃশ্বাস দিয়ে ডেবে দিতে হয়। যার বাস্তব প্রমাণ হিসেবে আমি বিহারীর নাম নেবো।


বই: "চোখের বালি"

লেখক: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রকাশকাল: একুশে বইমেলা ২০১৫

প্রকাশনী: নাঈম বুকস ইন্টারন্যাশনাল

প্রচ্ছদ: রাজু আহমেদ

প্রচ্ছদ মূল্য: ১৭৫ টাকা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ